তামীরুল_মিল্লাত_কামিল_মাদ্রাসা!

#College_Review_5
#তামীরুল_মিল্লাত_কামিল_মাদ্রাসা

(আমার লেখা সবচেয়ে বড় রিভিউ এটি,হাতে সময় থাকলে  অবশ্যই পুরোটা  পড়ে নিবেন )

আপনি যদি মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী হন,বা মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে আপনার সামান্য কোন আগ্রহ থাকে তবে এই পুরো রিভিউটা আপনার জন্যই...



বাংলাদেশে নানা শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান, বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম, আলিয়া মাধ্যম, কওমি মাধ্যম। সেক্যুলার আর ব্রাক্ষন্যবাদী প্রভাবে বাংলা মাধ্যম যখন প্রভাবিত, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ইংরেজি মাধ্যমও যখন সঠিক আদলে নেই তখন দুই মাধ্যমের সমন্বয় সাধন করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলামি শিক্ষা বিস্তার করছে দেশের হাজারো আলিয়া মাদরাসা। ইসলামি জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মতো আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে আলিয়া মাদরাসাগুলোর অবদান অনস্বীকার্য, আর এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা। বিগত এক যুগ ধরে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষস্থান তামিরুল মিল্লাতেরই দখলে।

জাতীয় পর্যায়ে চারবার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা। তামিরুল মিল্লাত ট্রাস্টি বোর্ডের পরিচালনায় পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের তিনটি শাখা রয়েছে, যাত্রাবাড়ী শাখা, মাতুয়াইল মহিলা মাদ্রাসা শাখা এবং টংগী শাখা। তিন শাখা মিলে তামিরুল মিল্লাতের বর্তমান শিক্ষার্থী প্রায় ১৫ হাজারের কাছাকাছি।

১৯৬৩ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। তারপর কালের বিবর্তনে
আজ তা পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়ে বিরাট মহীরূহে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক সফলতা ও দ্বীনি শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সনে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা টঙ্গী ক্যাম্পাসের শুভ সূচনা হয়। এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, আবাসন ব্যবস্থা ও মনোরম পরিবেশ রয়েছে। মুসলিম মেয়েদের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ লক্ষণীয়, কিন্তু সেই তুলনায় তাদের জন্য মানসম্পন্ন স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান অপ্রতুল।

নারী গড়তে পারে একটি আদর্শ পরিবার ও সুন্দর সমাজ, সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক বিপর্যয় থেকে মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা এবং নারীকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ২০০০ সনের শুরুতে রাজধানীর উপকণ্ঠে তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট সূচনা করে- তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা।

এরই ফলশ্রুতিতে ঢাকার অদূরে মাতুয়াইল চিটাগাং রোডের পাশে মনোরম পরিবেশে আবাসিক সুযোগ সুবিধাসহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘‘তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদ্রাসা ক্যাম্পাস’’। অভিভাবকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ২০১২ সাল হতে টঙ্গী ক্যাম্পাসে কামিল পর্যন্ত শরীয়ত সম্মতভাবে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা বালিকা শাখা টঙ্গীও তাদের যাত্রা শুরু করেছে।

মাদরাসায় প্রথম শ্রেণি থেকেই পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে, প্রতি শ্রেণিতে রয়েছে দুইটি করে সেকশন।

অন্যান্য কার্যক্রমেও পিছিয়ে নেই তামিরুল মিল্লাত। মাদ্রাসায় রয়েছে মিল্লাত সাংস্কৃতিক জোট, তামিরুল মিল্লাত ছাত্র সংসদ, মিল্লাত ইউটিউবারসহ প্রভৃতি সংগঠন।

আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষিত হয়েও যে দেশের আধুনিক শিক্ষা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের উপর ছড়ি ঘুরানো যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ম্যাথ, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে এ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজ পর্যায়ে প্রায়ই বিজয়ের মুকুট লাভ করেন, এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় এ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সাফল্য নজরকাড়া।

লাখো শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ও ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২০১৫, ২০১৭ সালে প্রথম হয়েছে তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার দুই ছাত্র যথাক্রমে আব্দুর রহমান ও আব্দুল্লাহ।

এছাড়া মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও তামিরুল মিল্লাতের ছাত্রদের মধ্য থেকে অনেকেই প্রতি বছর উত্তীর্ণ হয়ে চান্স পায়।

দেশের বাইরের বিভিন্ন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আল আজহার, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইউরোপের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়েও তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থীদের পদচারণা বিদ্যমান।

📌📌📌
২০১৬ সালে ব্রিটিশ রাণীর হাত থেকে ইয়ং লিডার পদকে ভূষিত হওয়া দেশের উজ্জ্বল সন্তান উসামা বিন নুর হাই স্কুল জীবনে তামিরুল মিল্লাত মাদরাসারই ছাত্র ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে অধ্যাপনার করছেন তামিরুল মিল্লাতের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলেম, ইসলামি স্কলার, ব্যাংকার,সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হিসেবে, কবি, সাহিত্যিক হিসেবে তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থীরা কর্মরত আছেন।

এই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি সময় কাটানোর জন্য বিশাল খেলার মাঠ,মসজিদ, লাইব্রেরীসহ আরও অসংখ্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে.. পড়ালেখার পাশাপাশি এই মাদ্রাসায় আরও কিছু সহ শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে..
ডিবেট ক্লাব,সাইন্স ক্লাব, ফটোগ্রাফি ক্লাব,আর্ট ক্লাব,আবৃতি ক্লাব,রিসার্চ ফোরাম,সাংস্কৃতিক সংসদ সহ আরও বেশ কিছু সতন্ত্র ক্লাব রয়েছে,এই ক্লাবগুলো সাপ্তাহিক, মাসিক কর্মশালা সহ প্রায়ই বিভিন্ন ফেস্টের আয়োজন করে থাকে....এবং প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের লেখা গল্প, কবিতা,ও প্রবন্ধ নিয়ে একটি মাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় এবং বছর শেষে বাৎষরিক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়..

২০১৯ সালের এটিএন বাংলায় প্রচারিত একটি জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এই মাদ্রাসার ডিবেট ক্লাব রানারআপ হয়..

💰খরচঃ এটি একটি বেসরকারি মাদ্রাসা। তাই কিছুটা খরচ বহন করতেই হয়। মাদ্রাসার নিজস্ব হলে সিট পেলে কোচিং বেতন, হোস্টেল ফি সবমিলিয়ে মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার ভিতরেই খুব ভালো ভাবে চলে যায়...।আর যদি হলে সিট না পাওয়া যায়..তাহলে খরচটা আরও সামান্য একটু বেশি হয়..

🇧🇩একটি মজার ব্যাপারঃ এই মাদ্রাসাটিতে পড়লে আপনি একটি পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার মজা উপভোগ করবেন...

কি নাই এখানে....

ছাত্র বান্ধব সবই আছে এখানে....

আরও একটা মজার বিষয়, এই পুরো মাদ্রাসাটিতে একটি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ রয়েছে...

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের অধীনে রয়েছে আরও প্রায় ১৫ টির মতো ছাত্র সংসদ। বিভিন্ন হলগুলোতে বসবাস রত শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে হল সংসদের ভিপি ও জি এস নির্বাচিত হন..
এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদও বিশেষ শিক্ষার্থীদের ভোটেই ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হয়...

মাদ্রাসায় ছাত্রসংসদের জন্য স্বতন্ত্র কক্ষ রয়েছে...
যেখানে ভিপি ও জিসের জন্য পৃথক কক্ষ রয়েছে...

ভিপি জিএস শিক্ষার্থীদের যেকোনো দাবি আদায়ে ভুমিকা পালন করে থাকে....

তাছাড়াও অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে তহবিল গঠন করে ছাত্রদের পড়ালেখা এগিয়ে নিতে সাহায্য করা হয়...

📌📌📌এ মাদ্রাসায় আবেদনের নূন্যতম যোগ্যতা ও আসন সংখ্যাঃ

📍বিজ্ঞান বিভাগ: জিপিএ ১.০০( আসন সংখ্যা ৯৯০ )

📍মানবিক বিভাগ: জিপিএ ১.০০( আসন সংখ্যা ৫৮০ )

বিঃদ্রঃ এখানে নূন্যতম আবেদনের যোগ্যতা খুবই কম দেওয়া আছে..। কিন্তু এই মাদ্রাসায় ভর্তির সুযোগ পেতে হলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ এবং অন্যান্য বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৫০ এর উপর পেতে হয়...

📌📌📌২০১৯ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলঃ

মোট অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীঃ ৭৮১জন।
মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীঃ ৭৮১ জন।
মোট অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীঃ ০ জন।
মোট জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীঃ ৪০৯ জন।
মোট জিপিএ ৪ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীঃ ৩৫১জন।
মোট জিপিএ ৩ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীঃ ২০ জন।
মোট পাশের হারঃ ১০০%

প্রতিবছর এই মাদ্রাসা থেকে ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় শুধু ঢাকা ভার্সিটিতেই শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়..
এবং জাতীয় মেধাতালিকায় সেরা ১০ জনের ৩ থেকে ৫ জনই এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হয়ে থাকে..।তাছাড়া মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়..
প্রতিবছর এই মাদ্রাসা থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী সারাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের দপ্তর সহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সচিবালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অগ্রনী ভুমিকা পালন করছে এই মাদ্রাসার কৃতি শিক্ষার্থীরা।


ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত

----------------------------------------------------------------------------

আপনার পছন্দের কলেজের রিভিউ পেতে জেলার নাম সহ কলেজের পুরো নাম পোস্ট করুন এই গ্রুপে।সারা বাংলাদেশের যেকোনো কলেজ সম্পর্কে জানতে ও জানাতে আপনার সকল শিক্ষার্থী বন্ধুদের এই গ্রুপে ইনভাইট করুন /এড করুন।















Comments