সিজোফ্রনিয়া | সিজোফ্রনিয়া কি/কী | সিজোফ্রনিয়া রোগের লক্ষন

 
সিজোফ্রনিয়া | সিজোফ্রনিয়া কি/কী | সিজোফ্রনিয়া রোগের লক্ষন

সিজোফ্রনিয়া


সি্জোফ্রেনিয়া: বিশ্ব জুড়ে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়া একটি মানসিকব্যাধি


সেসিলা প্রায় তার আশেপাশে সার্কাসের একটি ক্লোন দেখতে পায়। ক্লোনটি তার দিকে তাকিয়ে হাসে, কখন ও বা কাদে, আবার কখন একটি ছুরি নিয়ে তাকে আঘাত করে। তার এই অস্বাভাবিক বস্তু দেখার কথা সে তার মা কে জানায়। তার মা সাথে সাথে তাকে এই কথা অন্য কাউকে বলতে বারণ করে দেয়। সে তার মাকে না জানিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। সেসিলা জানতে পারে তার সিজোফ্রেনিয়া হয়েছে। এবং কিছদিন পর সেসিলা দেখতে শুরু করে একটি সাদা আলখাল্লা পড়ুয়া মেয়ে যে  সর্বদা একটি ছুরি নিয়ে হাটে। এটি হলো ২০১৫ সালের একটি সিজোফ্রেনিয়া রোগির ঘটনা। প্রত্যেকটি সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যাক্তির এই রোগ নিয়ে অভিজ্ঞতা ভিন্ন। সিজোফ্রেনিয়ার প্রভাব বয়সের সাথে বাড়তে থাকে। এই রোগের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা এখন ও উদ্ভাবিত হয়নি। কিন্তু নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রভাব রোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।


সিজোফ্রেনিয়া হলো এমন একটি রোগ যাতে চিন্তাধারার সাথে অনুভুতির সংগতি থাকেনা। বাস্তব পৃথিবীর  সাথে তাদের অভিজ্ঞতার মিল থাকেনা। সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যাক্তিরা সাধারণত এমন সব শব্দ শুনতে পায় যা বাস্তবে ঘটে না। সাধারণত কেউ মানসিক ভাবে খুব বিপর্জস্ত হলে এই রোগে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। প্রাথমিক ভাবে হ্যালুসিনেশন বা অলৌকিক শব্দ শুনা বা ভৌতিক কিছু অনুভব করা থেকে স্পষ্টভাবে কোনো কাল্পনিক বস্তু বা মানুষ দেখতে পায় এবং তার আদেশ পালন করে। এই মানুষটি সাধারণত তার বাস্তব জীবনের খুব প্রিয় কেউ বা হতে পারে কোনো অলৌকিক বস্তু যেমন সার্কাসের ক্লোন বা সাদা আলখাল্লা পরা মানু্ষ। বিভিন্ন স্তরে এই রোগের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ দেখা দেই। সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন মানুষের মধ্যে এই রোগের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা যায়। 


ক্রেপেলিন প্রথম অন্যান্য মানসিক রোগ থেকে সিজোফ্রেনিয়াকে আলাদা করে শ্রেণিভুক্ত করেন। সিজফ্রেনিয়া থেকে বাকি মানসিক রোগের ভিন্নতা হলো একজন সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যাক্তি সচেতন বুদ্ধিমত্তায় থাকে এবং তিনি নিজেই তার রোগের লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারেন। কিন্তু সঠিক সময়ের মধ্যে চিকিৎসা না পেলে অনেকেই তাদের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। 


এতক্ষন সিজোফ্রেনিয়ার সম্পর্কে জেনে আমাদের প্রশ্ন আসতেই পারে কেউ সিজোফ্রেনিয়াই আক্রান্ত কেন হয়? দুঃখজনকভাবে বিজ্ঞানীরা এখনও সঠিক কোনো কারণ বলতে পারেনি। তবে জন্মগতভাবে কারো কখনো এই রোগটি হয় না। কিন্তু ডাক্তারেরা মনে করে পরিবারের কারো সিজোফ্রেনিয়া হলে ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের ও এই রোগটি থাকতে পারে। সাম্প্রতিক একটি রিসার্চে পাওয়া গেছে, সাধারণ মানুষের সাথে সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মস্তিস্কে কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়, যেমন সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যাক্তির ভেন্ট্রিকল(মস্তিস্কের একটি জায়গা) সাধারণ মানুষ অপেক্ষা বড়। আরেকটি লক্ষনীয় ভিন্নতা হলো আক্রান্ত ব্যাক্তির মস্তিস্কের নিউরোট্রান্সমিটার নামক কেমিকালে অন্যান্য মানুষ থেকে ভিন্নতা থাকে। নিউরোট্রান্সমিটার সাধারণত আমাদের যোগাযোগ বা কমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে সিজোফ্রেনিয়া রোগীর মস্তিস্কের টিসু খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। 


সিজোফ্রেনিয়া রোগীর অবশ্যই মানসিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। লক্ষনের তীব্রতা অনুযায়ী আক্রান্ত ব্যাক্তি ঘরে থেকে নাকি হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবে তা ঠিক করতে হবে। একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগীর অবশ্যই  প্রয়োজনীয় ঔষধ, সামাজিক সহায়তা, পুর্নবাসন নির্ধারিত করতে হবে ।সিজোফ্রেনিয়া রোগীকে সাধারণত এন্টী-সাইকোটিক ঔষধ সেবন করতে হয়। এখন পর্জন্ত সিজোফ্রেনিয়া সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগীও সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারে।

Tag:সিজোফ্রনিয়া, সিজোফ্রনিয়া কি/কী,সিজোফ্রনিয়া রোগের লক্ষন


Comments